নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: সদ্য ঘোষিত সোনারগাঁ উপজেলা আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের দলে ঠাঁই না হলেও স্থান পেয়েছেন চাকুরীজীবি ও প্রবাসী। কমিটি ঘোষনা হওয়ার পর এ দুজনকে কোন নেতা না চিনলেও পরে খবর নিয়ে জেনেছেন তাদের দুজনই আওয়ামীলীগের কেউ নন। তারা আত্মীয়তা ওয়ারিসে দলে জায়গা করে নিয়েছেন। এ নিয়ে আজ দিনভোর উপজেলা জুড়ে ছিল আলোচনা সমালোচনা ঝড়।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুমকে যুগ্ন-আহবায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করেন নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। সেই কমিটি ঘোষনার পর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের একাংশ তার বিরোধীতা করে আসছিলেন। সেই কমিটি ঘোষনার পর দীর্ঘদিনে মনোমালিন্য ভুলে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, মাহফুজুর রহমান কালাম, এএইচএম মাসুদ দুলাল একমঞ্চে উঠে জেলা কমিটির ঘোষিত আহবায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষনা করে তাদের প্রতিহত করার জন্য যেখানে যাবে সেখানে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষনা দেন। এর পরিপেক্ষিতে জেলা কমিটির ঘোষিত আহবায়ক কমিটি জামপুর উটমা পাইমারী স্কুলে আহবায়ক কমিটির সম্মেলন দিলে কায়সার-কালামের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে লাঞ্চিত করে। এরপর কালামকে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন জেলা আওয়ামীলীগ।
এদিকে আহবায়ক কমিটি যখন বিলুপ্তির জন্য কায়সার পন্থীরা জোরেসোরে মাঠ কাজ করছিলেন তখন আহবায়ক কমিটিকে টেকাতে ফন্দি আটেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম এমপি। তিনি আহবায়ক কমিটিকে বহাল রেখে কায়সারসহ কায়সার কালাম পন্থী নেতাদের নিয়ে কমিটি পূর্ণবিন্যাস করার প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাব অনুযায়ী কায়সারসহ আরো কয়েকজন নেতাকে অর্ন্তভুক্ত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন জেলা আওয়ামীলীগ। সে কমিটিতে বাদ দেয়া হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন বর্ষিয়ান ও ত্যাগী নেতাদের। অথচ দলে অর্ন্তভুক্ত করা হয় ইটালী প্রবাসী মাহাবুব সরকার নামের এক ব্যক্তিকে যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইটালীতে রয়েছে। আরেকজন রয়েছেন ট্রাভেলস কোম্পানীতে চাকরীরত চাকুরীজীবি যিনি জীবনে কোন দিন জয়বাংলা বলেনি। তাদের দলে অর্ন্তভুক্ত করায় সমালোচনার মূখে পড়েছে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সুত্র জানায়, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ মোল্লা বাদশা, প্রচার সম্পাদক ও নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান উদ্দিন চুন্নু, কোষাদক্ষ ও সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা। আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করার পর তাদের নাম না দেখে হতাশ হয়েছেন তৃনমুল নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘদিন যারা আওয়ামীলীগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সেসব নেতাদের বাদ দিয়ে দলে প্রবাসী ও চাকুরীজীবিদের দলে কিভাবে স্থান দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সর্বদলীয় নেতারা। আওয়ামীলীগ ছাড়াও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা আওয়ামীলীগের এ বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না। তারা মনে করেন দলের নেতৃত্ব নেতাদের হাতে থাকা ভাল। দলের নেতৃত্ব যদি যাতা লোকের হাতে চলে যায় এতে দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করার পর তাদের নাম না দেখে হতাশ হয়েছেন তৃনমুল নেতাকর্মীরা। তবে, সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত ও মোশারফ হোসেনের মতো নেতাদের দলে অর্ন্তভুক্ত করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
সুত্র আরো জানান, মাহাবুব নামের যে ইটালী প্রবাসী দলে জায়গা পেয়েছেন তিনি আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমপি মির্জা আযমের আত্মীয়। তার বাড়ী শম্ভুপুরা ইউনিয়নে। মাহাবুব রহমান লিটন নামের যে ব্যক্তি দলে রয়েছেন তিনি গুলশান এলাকায় একটি ট্রাভেলস এজেন্সীতে চাকুরী করেন। তিনি হচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই এর আত্মীয়। সে সুত্রেই তিনি দলে জায়গা করে নিয়েছেন।